“… তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সাংবাদিক অনিল ভট্টাচার্য। তিনি মেলার মাঠে থাকতেন। তিনি কলকাতার যুগান্তর কাগজের প্রতিনিধি। তার বাংলাদেশের সব ঘটনা নখদর্পণে। ঢাকার যতো লোক ‘৭১ সালে ভারত গিয়েছে, তারা আগরতলা গিয়ে অনিলদার বাসায় খোঁজ-খবর নিয়েছে, তাজউদ্দিন আহমেদ থেকে এমএজি ওসমানী পর্যন্ত সবাই। অনিলদার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের খুব খাতির ছিল। জিয়াউর রহমান অনিলদাকে অনিল বলে ডাকতেন এবং বহুবার স্বাধীনতার পর অনিলদাকে ঢাকায় আমন্ত্রণ করে এনেছেন। অনিলদা মারা গেছেন। আমাদের শেষ দেখা হওয়ার আগের দিন আমাকে বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে একটি বই লিখবেন, তাতে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা থাকবে। এজন্য তিনি বার বার বাংলাদেশে আসছেন।
তিনি আমাকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষমতা কাদের হাতে যাবে। যুদ্ধের শেষদিকে জিয়াউর রহমান একদিন নাকি অনিলদাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, “অনিল যুদ্ধ শেষে তোমরা কাকে ক্ষমতা দিয়ে যাবে? যারা এখানে ৫৫৫ সিগারেট টেনেছে আর গল্প করে দিনে ঘুমিয়ে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে দিন কাটিয়েছে, না কোনো সংগঠিত বাহিনীর হাতে ক্ষমতা দিয়ে যাবে?” শুনলাম, অনিল্দা এর পরবর্তীকালে মারা গেছেন। তার বই লেখা শেষ হয়েছে কিনা তাও আমি খোঁজ-খবর করতে পারিনি। আমি নিজে অসুস্থ। তাই অনিলদার কথা মনে গেঁথে রেখেছি। আজকে লিখলাম।
নির্মল সেন আমার জীবনে একাত্তরের যুদ্ধ ॥ বর্তমান সময় – ফেব্রুয়ারী, ২০০৯ । পৃ: ২৩-২৪
২।
“… দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব নিয়েই আমি জিয়াউর রহমানকে ফোন করি। জিয়া উত্তরে আমাকে বলে, ‘ঠিক আছে শফিউল্লাহ গুডবাই।’ আমি তার কাছ থেকে কনগ্র্যাচুলেশন আশা করেছিলাম কিন্তু সে আমাকে গুডবাই উপহার দেয়।
তিনি আমাকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষমতা কাদের হাতে যাবে। যুদ্ধের শেষদিকে জিয়াউর রহমান একদিন নাকি অনিলদাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, “অনিল যুদ্ধ শেষে তোমরা কাকে ক্ষমতা দিয়ে যাবে? যারা এখানে ৫৫৫ সিগারেট টেনেছে আর গল্প করে দিনে ঘুমিয়ে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে দিন কাটিয়েছে, না কোনো সংগঠিত বাহিনীর হাতে ক্ষমতা দিয়ে যাবে?” শুনলাম, অনিল্দা এর পরবর্তীকালে মারা গেছেন। তার বই লেখা শেষ হয়েছে কিনা তাও আমি খোঁজ-খবর করতে পারিনি। আমি নিজে অসুস্থ। তাই অনিলদার কথা মনে গেঁথে রেখেছি। আজকে লিখলাম।
আমি ও জিয়াউর রহমান একই ব্যাচে ছিলাম। দু’জনের একই প্রশিক্ষণ, একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। কিন্তু জিয়া আমার থেকে বাই-নম্বরে সিনিয়র ছিল। আমাকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিতে বলায় জেনারেল রবকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘ দু’ঘন্টা কথা বলি তাকে আমি জানাই, জিয়াউর রহমান আমার থেকে বাই-নম্বরে সিনিয়র। বঙ্গবন্ধু বলেন, ” দেয়ার আর সামথিং কলড পলিটিক্যাল ডিসিশন (এটা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত)।” আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘ফ্রম টুডে অ্যান্ড নাও অনওয়ার্ডস আই অ্যাম ভিকটিম অব সারকামসট্যানসেস ( আজ এবং এখন থেকে আমি পরিস্থিতির শিকার)।’ বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, ‘তোমরা বড় বেশি বড় বড় কথা কথা বল। যাও কাল থেকে জেনারেল ওসমানীর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নাও॥”
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ৪৫ নং স্বাক্ষী মে: জেনারেল (অব:) শফিউল্লাহর জবানবন্দী
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এ্যাড: সাহিদা বেগম ॥ তাম্রলিপি – ফেব্রুয়ারী – ২০১০ । পৃ: ৬৮
৩।
” … জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে তার জীবনের উপর সার্বক্ষণিক ঝুঁকি রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে প্রবাসী সরকারের বিশেষভাবে যুব নেতৃত্ব, ক্রমশ:ই স্পর্শকাতর হয়ে ঘটনাটিকে ইতিহাস থেকে কিভাবে মুছে ফেলা যায় সেই ধান্ধায় প্রবাসী সরকারের চট্টগ্রামের আওয়ামী নেতৃত্বের উপর বেজায় খাপ্পা হয়ে উঠেছিল। ঐ সব বীরপুঙ্গবেরা সঠিক সময়ে ঐ ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করে ফেললেই তো ল্যাঠা চুকে যেত।
এই প্রসঙ্গে জেড ফোর্সের তৃতীয় বেঙ্গল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিল লিখেছেন, ”…শিলং সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় উল্লেখ করার মতো একটি ঘটনা ঘটে। ১১ ডিসেম্বর এক বাংলাদেশি ভদ্রলোক আমাকে দেখতে এলেন। তিনি তার পরিচয় দিলেন ব্যারিস্টার আবদুল হক। সিলেট জেলার একজন নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি তিনি।”
আবদুল হক আরও জানালেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার প্রধান রাজনৈতিক সমন্বয়কারীর দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। এই ভদ্রলোককে আমি আগে কখনো দেখিনি। আর দেখার সুযোগই বা কোথায়। ১০ অক্টোবরেই তো রংপুরের রৌমারী এলাকা থেকে দীর্ঘ ভারতীয় ভূখন্ড পাড়ি দিয়ে সোজাসুজি ছাতকের উত্তপ্ত রণাঙ্গণে প্রবেশ করেছি। তারপর থেকে তো একের পর এক যুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধে আহত হয়ে আবার ২৮ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে।
৩ নং এর সোর্স?